নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সজীবসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। নির্মাণ ত্রুটি ও শ্রমিক পরিচালনার ত্রুটি আছে কিনা এগুলো তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর সব কিছু জানানো হবে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কেউ যদি সামান্যতম এ ঘটনায় ভুলভ্রান্তি করে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে আসবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচারের সম্মুখেই এই তদন্ত প্রতিবেদন চলে যাবে।
এছাড়া ভবন মালিক নিখোঁজ থাকলেও আটজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫২ জনের পরিচয় জানতে এক মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ রাব্বী সবুজ।
শনিবার (১০ জুলাই) সকালে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৬ টি মরদেহের বিপরীতে ৩৫ জন দাবিদারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনও সব দাবিদার আসেননি। তারা এলে পর্যায়ক্রমে তাদের নমুনা নেয়া হবে। একইসঙ্গে যাদের নমুনা নেয়া হয়েছে সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। সব মিলিয়ে আশা করা যায় এক মাস সময়ের মধ্যে পরিচয়গুলো আমরা শনাক্ত করতে পারব।’
মাসুদ রাব্বী আরও বলেন, ‘আমরা রেফারেন্স নমুনা সংগ্রহ করছি। মৃত ব্যক্তির দাবিদাররা এসেছেন। তাদের কাছ থেকে রক্ত নিচ্ছি। ডেডবডির দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ধরনের নমুনাগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।’
তিনি বলেন, ‘নিহতদের পরিচয় রূপগঞ্জ থানা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানতে পারবেন স্বজনরা। তারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট। ওনাদের মাধ্যমে পরিবারগুলো তথ্য পেতে পারে।’
এর আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, গতকাল (শুক্রবার) ৪৮টি মরদেহের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ডিএনএ শনাক্তকরণের মাধ্যমে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সব মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ নমুনা ঢাকা মেডিকেলের মর্গ থেকে নেয়া হবে।
তবে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হবে ২৫টি মরদেহ। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। ৮টি রাখা হবে ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে। সবগুলো মরদেহ ফ্রিজিং করে রাখা হবে। ডিএনএ শনাক্তের পর সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।