ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা ফুটবল ফাইনালে ২৮ বছরের আক্ষেপ ঘোচালো আর্জেন্টিনা।
রিও ডি জেনেইরোর বিখ্যাত মারাকানায় সেলেসাওদের ১-০ গোলে হারিয়ে ১৯৯৩ সালের পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা।
সেই সঙ্গে লিওনেল মেসিরও ক্যারিয়ারের একমাত্র আক্ষেপ ছিল দেশের হয়ে একটি ট্রফি; সেটাও হয়ে গেলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে।
রোববার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে খেলাটি শুরু হয়। মেসি-ডি মারিয়া-লাউতারো মার্টিনেজকে আক্রমণে রেখে একাদশ সাজিয়েছে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি।
অন্যদিকে ব্রাজিলের আক্রমণে আছেন নেইমারের সঙ্গে এভারটন, লুকাস পাকুয়েতা, রিচার্লিসনরা।
ম্যাচের ২২ মিনিটের সময় গোল দিয়েছিলেন ডি মারিয়া; সেটি আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল।
তবে সেমিফাইনালের মতো এবারো আর্জেন্টাইনদের গোল খাওয়া থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
ব্রাজিল গত আসরের কোপা চ্যাম্পিয়ন ছিল। কিন্তু নিজেদের মাটিতে ট্রফি ধরে রাখতে পারেননি নেইমাররা। এর আগে সর্বশেষ ২০০৭ সালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল; সেবার আলবিসেলস্তেদের উড়িয়ে দিলেও মারাকানায় পারেননি তিতের শিষ্যরা।
বল দখলের লড়াই হতে শুরু করে আক্রমণেও এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। ম্যাচের ৬০ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখার সঙ্গে আর্জেন্টিনার বার লক্ষ্য করে শট নেয় ১৩টি। কিন্তু রক্ষণভেদ করে বল জালে জড়াতে পারেননি নেইমার-ফিরিমিনোরা।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা মাত্র ৬টি শট নেয় তাতেই সফল দলটি।
এই ম্যাচে মেসি-নেইমার তাদের সেরাটা দিতে পারেননি। শেষ দিকে মেসি একটি সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডারসনকে ফাঁকি দিতে পারেননি। আর্জেন্টিনার ফাইনালে আসার পেছনে মেসির অবদানই বেশি ছিল সবচেয়ে।
যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটে এমারসনের ভুলে ব্রাজিলের ডি বক্সে বল পেয়ে যান ডি পল। তবে এডারসনকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি।
৮৯ মিনিটে ভিনিচিয়াস জুনিয়রকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন মন্টিল।
৮৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পান মেসি। ৬ গজ দূর থেকেও গোল করতে পারেননি এডারসনের দারুণ সেভে।
৮৭ মিনিটে আবারও আর্জেন্টিনার দুর্গ হয়ে দাঁড়ান মার্টিনেজ।
৮২ মিনিটে ব্রাজিলের মার্কুইনহস ও ৮৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার ওটামেন্ডি হলুদ কার্ড দেন।
৫৫ মিনিটে মার্টিনিজের দারুণ সেভে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল।
৫২ মিনিটে রিচার্লিসনের গোল বাতিল হয় অফ সাইডে। খুব কাছ থেকে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাকুয়েতার কারণে অফসাইড হওয়ায় বাতিল হয় গোল।
৫১ মিনিটে নেইমারকে মাঝমাঠে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন লো সেলসো।
প্রথমার্ধ শেষে এগিয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। আক্রমণ ও বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও ব্রাজিলকে দেখাচ্ছে ছন্নছাড়া। প্রথমার্ধের ৫৪ শতাংশ সময় বল ছিল নেইমারদের পায়ে। ব্রাজিল ৬টি শট নিয়েও গোল পায়নি অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ৩টি শটের মধ্যে ১টি গোল। হলুদ কার্ড দেখেছেন ব্রাজিলের ফ্রেড ও আর্জেন্টিনার পারেদেস।
৩৩ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন পারেদেস। আর্জেন্টিনার গোলবারের ২৫ গজের মধ্যে ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। নেইমার কাজে লাগাতে পারেননি।
২২ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। রেনান লোদির ভুলে ডি মারিয়া এডারসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্রাজিলের জালে বল জড়ান। ব্রাজিল ডিফেন্সের ওপর দিয়ে ডি পলের শট প্রথম সুযোগেই নিজের আয়ত্বে নেন ডি মারিয়া; লোদি থাকলেও তিনি রক্ষা করতে পারেননি।
একা এডারসনকে ফাঁকি দিতে সমস্যা হয়নি অভিজ্ঞ ডি মারিয়ার। তিনিই প্রথম আর্জেন্টিনা ফুটবলার যিনি ২০০৪ সালের পর কোপার ফাইনালে প্রথম গোল করেন।
৩ মিনিটের সময় হলুদ কার্ড! খেলা শুরু না হতেই ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন ব্রাজিলের ফ্রেড। সাইডলাইনে মন্টিলকে ফাউল করায় ফ্রেড এই শাস্তি পান।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে রদ্রিগো পলের একটি চেষ্টা দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন এদেরসন। বাকি সময়ে কোনোমতে কাটিয়ে দিয়ে মারাকানায় প্রথমবার কোনো শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে আর্জেন্টিনা।