কী রচনা, কী প্রযোজনা, নির্দেশনা ও পরিচালনা, কী অভিনয়, কী নাট্যশিল্পী সৃষ্টি করা- সব ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত তিনি আব্দুল্লাহ-আল-মামুন। আজ তার জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ১৩ জুলাই জামালপুরে আমড়া পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।
আবদুল্লাহ আল-মামুনের পিতা অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস এবং মাতা ফাতেমা খাতুন। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এম এ পাস করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পেশাগত জীবন শুরু করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে। পরবর্তীকালে পরিচালক, ফিল্ম ও ভিডিও ইউনিট (১৯৬৬-১৯৯১), মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমী (২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে মঞ্চনাটকে একটি বিপ্লবের সূচনা হয় স্বাধীনতার পর পরই। কালক্রমে তার উৎকর্ষ দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হয়ে ওঠে। এই বিরাট সাফল্যের পেছনে আবদুল্লাহ আল মামুনের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। কী রচনা, কী প্রযোজনা, নির্দেশনা ও পরিচালনা, কী অভিনয়, কী নাট্যশিল্পী সৃষ্টি করা- সব ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একটি অসাধারণ নাট্য পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেছিলেন দেশের এই কীর্তিমান সুসন্তান।
আবদুল্লাহ আল-মামুন ছাত্রজীবন থেকেই নাট্য রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তার অভিনয়জীবনে চাষি থেকে শুরু করে যুবক, নেতা, সেনাপতি, মাতবর, বাবা, শিক্ষক, ব্যারিস্টার, নায়ক, বাউল, ফকির, হাজী, ব্যাপারী, ব্যবসায়ী প্রভৃতি স্বদেশীয় চরিত্রের পাশাপাশি ওথেলো নাটকে ইয়াগো, আন্তিগোনে নাটকে ক্রেয়ন প্রভৃতি ভিন দেশি চরিত্রে অভিনয় করেন। সঙ্গত কারণেই তার নাটকে বাংলাদেশের সমসাময়িক পারিবারিক, সামাজিক ও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিচিত্র পেশাজীবী মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে। অসংখ্য নাটক রচনায় যেমন নিজের প্রতিভা আর শক্তির পরিচয় দিয়েছেন তিনি, তেমনি নিজের অপরিমেয় ক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন তার নির্দেশনায় ও অভিনয়েও।
দীর্ঘ রোগভোগের পর ২১ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাট্যামোদী মানুষের প্রিয় এই ব্যক্তি। সেই সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।