সত্তর-আশির দশকের পর্দা কাপানো তারকা। সেই সময়ের তরুণীদের স্বপ্নের পুরুষ। ঢাকাই সিনেমার সুদর্শন নায়ক। তিনি মহানায়ক বুলবুল আহমেদ। আজ এই গুণী অভিনেতার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়ক বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকায়। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ, তার পিতামাতা তাকে ‘বুলবুল’ বলে ডাকতেন। তিনি তার পিতামাতার অষ্টম সন্তান।
দারুণ মেধাবী এই ব্যক্তি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তিনি একটি ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরির পাশাপাশি শুরু করেন টিভিতে অভিনয়।
বুলবুল আহমেদ অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ছিল আবদুল্লাহ আল-মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’। এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হচ্ছে ‘মালঞ্চ’, ‘ইডিয়েট’, ‘মাল্যদান’, ‘বড়দিদি’, ‘আরেক ফাল্গুন’ ও ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। ধারাবাহিক ও খণ্ড নাটক মিলিয়ে চার শতাধিক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ টিভি নাটক ছিল ২০০৯ সালে শুটিং করা ‘বাবার বাড়ি’। ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন তিনি। এর পরের বছর আবদুল্লাহ আল-মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমাতে অভিনয় করেন। দুটি চলচ্চিত্র ওই সময় দারুণ হিট হয়।
তবে বুলবুল আহমেদ ঢাকাই সিনেমার দর্শকের কাছে চিরদিন শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি দুই চরিত্র ‘শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’-এ দুর্দান্ত রূপদান করে। এ ছাড়া ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্যকন্যা’ সিনেমাগুলোয় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অনন্য উচ্চতায়।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক হিসেবে সফলতা পেয়েছেন বুলবুল আহমেদ। তার পরিচালিত ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘ভালো মানুষ’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘গরম হাওয়া’, ‘কত যে আপন’ সিনেমাগুলো আলোচিত হয়েছে। অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধূ বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ‘১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনিই ঢালিউডের প্রথম ‘মহানায়ক’, এমনকি ‘দেবদাস’ও।
বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ। এই দম্পতির তিন সন্তান হলেন মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ।