বিশ্ব করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের ‘শুরুর ধাপে’ রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরইমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত অবস্থা কিছুটা সামলে ওঠার আগেই মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত পেলো।
ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল রিসার্চের মহামারি ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রধান ডা. সমীরণ পাতিল এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে গেল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে।
সমীরণের ইঙ্গিত, আসছে আগস্ট মাসের শেষ দিকেই ভারতে মহামারি করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ বিকট আকার ধারণ করতে পারে। তবে তৃতীয় ঢেউটি দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো এতটা তীব্র না-ও হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গেল বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিস্থিতি সামনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা ভারতের নাভিঃশ্বাস উঠে চলতি বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে।
গেল এপ্রিলে ভারতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যায়। হাসপাতালগুলোতে জায়গা না পেয়ে অক্সিজেনের অভাবে রাস্তাঘাটে রোগীর মৃত্যু হয়। নদীতে ভাসতে দেখা যায় করোনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশ। এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের শুরু পর্যন্ত ভারতে দৈনিক ৩-৪ লাখ রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে মৃত্যুহারও দেশটিকে বেসামাল করে তুলেছিল।
মে মাসের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে কমতে থাকে।
গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ভারতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার আর মোট মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার প্রায়। ব্রাজিলকে টপকে আক্রান্তে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত মৃত্যুতে রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।
ভারতে উদ্ভূত করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই দেশটির বিপর্যয়ের মুখে পড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে ধরনটিকে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ডব্লিউএইচও। ডেল্টার দাপট এখনও চলমান থাকায় কিছু দিনের মধ্যে ভারতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসার আভাস দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. সমীরণ বলেন, ‘আর এক মাস বাদে আগস্টের শেষ দিকেই তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে, এটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সেই তীব্রতা নিয়ে আসবে।’
চারটি কারণে ভারতে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. সমীরণ।
যার মধ্যে প্রথমত, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে যাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, রোগ প্রতিরোধে তার কার্যকারিতা ফুরিয়ে যাওয়া; দ্বিতীয়ত, অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিয়ে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব; তৃতীয়ত, অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে না পারলেও দ্রুত ছড়াতে সক্ষম ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব এবং চতুর্থত, বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ শিথিল।
সপ্তাহ খানেক আগেই দেশটির শীর্ষ চিকিৎসকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যেভাবে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হচ্ছে, জনসমাগম ঘটছে, তাতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস গেল ১৫ জুলাই বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে বিশ্ব এখন সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ডেল্টার আরেকটি পরিবর্তিত রূপও ধরা পড়েছে ভারতে, যাকে ‘ডেল্টা প্লাস’ বলা হচ্ছে।
তবে কি এই ‘ডেল্টা প্লাস’ই তৃতীয় ঢেউয়ের কারণ হবে- এমন প্রশ্নে ডা. সমীরণ বলেন, ‘ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস, দুটোই এখন দেশজুড়ে সক্রিয়। তবে ডেল্টার জন্য আগের মতো বিপর্যয় দেখা দেবে বলে আমি আশা করি না।’