যারা ডায়েট বা ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সামান্য রিসার্চ করেছেন, তারা সবাই মোটামুটি জানেন যে ইদানীং না খেয়ে থাকাটা ওজন নিয়ন্ত্রণের অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এ কথা ঠিকই, যে আজকাল হরেক ধরনের খাবারের বিপুল আয়োজন সাজানো আছে আমাদের সামনে।
একটা ফোন করলেই হাতের কাছে এসে যাচ্ছে যে কোনো সুখাদ্য। ফলে জেনে, না জেনে আমরা সকলেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি শরীরে ভরছি। সেই অনুযায়ী হাঁটা-চলা হয় না কারও। ফলে বাড়ছে মেদের ভার। তার সঙ্গে লড়াই করতে গেলে খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। মাঝে মাঝে উপোস দেওয়াও চলতে পারে। তাতে বাড়তি মেদের বোঝা কমবে তাড়াতাড়ি, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হবে।
এই পর্যন্ত চিন্তাভাবনায় কোনো সমস্যা নেই। মাঝে মাঝে খাবার না পেলে শরীরেরও ভেঙে পড়ার কথা নয়। বরং হিন্দু, মুসলিম, জৈন, খ্রিস্টান সব ধর্মেই নানা আচার-অনুষ্ঠানে না খেয়ে থাকাই নিয়ম – তাতে শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম বিশ্রামও পায়। ইদানীং অনেকেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের উপর আস্থা রাখেন। অর্থাৎ, ১২-১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকেন, বাকি সময়টায় অবশ্য কোনো বিধিনিষেধ নেই — যা খুশি খাওয়া যায়। কিছু কিছু উপোসের ক্ষেত্রে সারাদিন স্রেফ ফল খেয়ে থাকতে হয়, অনেকে উপোস চলাকালীন পানি পর্যন্ত স্পর্শ করেন না। জানতে চান, এর মধ্যে কোনটা কতটা কাজের?
প্রথমেই আস্থা রাখুন নিজের শরীরের উপর। যদি উপোস করে থাকলে আপনার গ্যাসের সমস্যা হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে সেটি আপনার সইছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি না খেয়ে থাকলে শরীর আর্দ্রতা হারাতে আরম্ভ করে একটা সময়ে। তাই অল্প অল্প জল খেতে পারেন। উপোস ভাঙার পর খুব ভারী খাবার বা ভাজাভুজি খাবেন না। চেষ্টা করুন ফল, ফলের রস, নিরামিষ স্যুপ বা ডালের জল খাওয়ার। কিছুক্ষণ পর ভারী খাবার খেতে পারেন, তবে হালকা রান্নাই ভালো। ঝোল-ভাত বা ডাল-তরকারি-ভাত খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যারা করেন, তাদেরও এই কথাগুলো মাথায় রেখে চলা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি রাতের খাওয়াটা আটটার মধ্যে সেরে ফেলতে পারেন, তা হলে। পরদিন সকাল আটটা বা সাড়ে আটটার আগে আর সলিড কিছু খাবেন না। পানি খেতে পারেন।
মনে রাখবেন, উপাস করার আগে বা পরে আপনি কী খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে শরীর কেমন থাকবে। তাই হালকা তেল মশলায় রান্না করা খাবার, ফল বা ছানার উপর আস্থা রাখুন। ওজন কিন্তু কেবল উপোস করলে বা কম খেয়ে থাকলেই কমবে না। আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মও। ব্যায়াম করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে, পানি খেতে হবে প্রচুর। তবেই ভালো থাকবেন।
কোন কোন ক্ষেত্রে উপাস করা একেবারেই ঠিক নয়:
এ কথা বলা হয় বটে যে ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কাজে দেয়। কিন্তু আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কোনো উপাস করার আগেই ডাক্তারের সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়া উচিত।
যাদের গ্যাসট্রিক বা পেপটিক আলসারের সমস্যা আছে, বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়, তারাও উপোস করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যদি দেখেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে আপনার ত্বক, চুলের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তা হলে আর করার দরকার নেই। বা নিয়মে পরিবর্তন আনুন। আর্দ্রতায় যেন ঘাটতি না পড়ে তা দেখবেন।
উপাস করার পর খুব দুর্বল লাগলে বা বমি ভাব হলেও বুঝতে হবে আপনার শরীর তা নিতে পারছে না।