করোনাকালে সর্বোচ্চ ঋণ এখন কৃষকের কাছে। এক বছরেই কৃষকের কাছে গেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাভাবিক ঋণ রয়েছে ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আর চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনার ঋণ রয়েছে।
আগের বিতরণকৃত ঋণ মিলে কৃষকের কাছে ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা পুরো ঋণই কৃষিঋণ।
এর বাইরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণের ২ শতাংশ ঋণ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। একই সময়ে করোনা মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলার জন্য চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে এ পর্যন্ত কৃষিঋণের মোট আউটস্ট্যান্ডিং রয়েছে ২০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে। এ জন্য সুদ হার সর্বনিম্ন নির্ধারণ করে দেওয়া আছে ৯ শতাংশ। চলতি বছরে শুরু থেকে আরও এক শতাংশ নামিয়ে আনা হয়। এর ফলে কৃষিঋণের সুদ হার নেমে দাঁড়ায় ৮ শতাংশ।
অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়। মাসভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। কোনো ব্যাংক ঋণ বিতরণ কোনো গড়িমসি করে থাকলে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে ফসলের মৌসুমে কৃষিঋণ বিতরণে পরিস্থিতি কঠোর পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
যে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা পল্লী অঞ্চলে নেই তারা এমআরএ নিবন্ধিত এনজিও-এর মাধ্যমে বিতরণ করে থাকে। ফলে কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিং করা হয়। এতে প্রতি বছরই প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা করে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে।
এ বছর ভয়ঙ্কর মহামারি করোনার আঘাতের কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আঘাত লেগেছে কৃষিতে। করোনার অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য প্রায় এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষিতেও বিতরণে করা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রণোদনার ঋণে কৃষক পর্যায়ে সুদ হার ৪ শতাংশ। এ ঋণে সরকার ৪ শতাংশ হারে সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের দায়িত্বশীল একজন ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক অনিহা দেখালেও অধিকাংশ ব্যাংক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণ করে। বেশকিছু ব্যাংক সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়ে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে। আর কৃষকরা প্রায় সবাই মেয়াদ শেষে ফেরত দেয় ও খেলাপি কম হওয়ার কারণে কৃষিঋণে আগ্রহের অন্যতম কারণ।
কৃষিঋণ বিতরণের জন্য নিয়োজিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংক দুটি ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ঋণ বিতরণ করেছে যথাক্রমে আট হাজার ২৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ও দুই হাজার ৬৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।