ই-কমার্স প্রতারণায় অতিষ্ঠ গ্রাহক ই-কমার্স প্রতারণায় অতিষ্ঠ গ্রাহক – Sabuj Bangla Tv
  1. shahinit.mail@gmail.com : admin :
  2. khandakarshahin@gmail.com : সবুজ বাংলা টিভি : সবুজ বাংলা টিভি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন
নোটিশ-
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন টিভি চ্যানেল সবুজবাংলা টিভি এর জেলা/উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

ই-কমার্স প্রতারণায় অতিষ্ঠ গ্রাহক

সবুজ বাংলা টিভি
  • প্রকাশ কাল | সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১
  • ২১৯ পাঠক

হঠাৎই দেশে ই-কমার্স ব্যবসা জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে লকডাউন চলাকালে মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ জন্মায় এই খাতের প্রতি।

অনলাইনে অর্ডার দেওয়া মাত্রই দোরগোড়ায় চলে আসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ সুযোগ লুফে নেয় মানুষ।  ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও নিত্যনতুন চটকদার অফার দিয়ে নজর কেড়ে নেয় গ্রাহকদের। আর এতেই ঘটে বিপত্তি।
কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহক অভিযোগ তোলেন, বিশেষ অফারে বিভিন্ন পণ্য নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক কম দামে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগাম অর্থ নিলেও নির্ধারিত সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরও তারা পণ্য ডেলিভারি করছেন না।
পরে তদন্তে নেমে বিভিন্ন সংস্থা দেখতে পায় গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ নামে-বেনামে অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, নিরাপদ ডটকম, ই-অরেঞ্জসহ কমপক্ষে ১৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযোগের পাহাড় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে
ইভ্যালি-ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যখন গ্রাহকদের অভিযোগের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে, ঠিক এমন সময় ই-অরেঞ্জ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। করোনাকালীন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে ই-অরেঞ্জ। মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানটি নানা পর্যায়ে আলাদা কৌশলে ব্যবসা চালাতে থাকে। গত ১৫ মে থেকে তারা পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে জটিলতা শুরু হয়।
ই-কমার্স পরিচালনা নিয়ে নানা সমালোচনা এবং এতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে পণ্য সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তারপরও বহু গ্রাহক টাকা জমা দিয়েছেন। গ্রাহকদের অর্থই মূলত আটকে যায়।
অভিযোগ মিলেছে, ২৮ এপ্রিলের পর থেকে অনেক গ্রাহক আর পণ্য বুঝে পাননি। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের ১৩৭ নম্বর রোডে ই-অরেঞ্জের বন্ধ অফিস ঘেরাও করেন গ্রাহকরা।
পরদিন ১৭ আগস্ট এক লাখ ভুক্তভোগীর এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী।
এজাহারে অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ই-অরেঞ্জ কম্পানির ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল। বারবার নোটিসের নামে ভুক্তভোগীদের পণ্য ডেলিভারি না করে প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, করোনাকালীন ভুক্তভোগীদের কষ্টার্জিত অর্থের নিশ্চয়তা না দিয়ে ই-অরেঞ্জ তাদের মালিকানা পরিবর্তনের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। নতুন মালিক ও পুরনো মালিকের কোনো তথ্য ভুক্তভোগীদের সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে না। আসামিরা সব ধরনের অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছে। এ মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও চিফ অপারেটিং অফিসার আমানউল্লাহ কারাগারে রয়েছেন। বীথি আক্তার ও কাউসার আহমেদ নামে দুই আসামি এখনো পলাতক। মেহজাবিন সাবেক ব্যাংকার ও তার স্বামী একটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে নিজেদের আড়াল করতে কৌশলে প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের মালিকানা বদল করেন তারা।
দ্রুত সমাধান চান গ্রাহকরা
ফয়সাল আহমেদ নামে ই-অরেঞ্জের এক গ্রাহক বলেন, ‘গ্রাহকদের সামার ভাউচার, স্বপ্ন ভাউচার, বাইক ডেলিভারি রিফান্ডসহ সব টাকা, সরকারিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও নিরপেক্ষ পক্ষ দিয়ে পরিশোধ করা হোক। কোনোভাবেই গ্রেফতার আসামিরা যেন মুক্ত না হতে পারে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের আগে।
এছাড়াও অন্যান্য প্রোডাক্ট ডেলিভারি এবং অবশিষ্ট অরেঞ্জ ব্যালেন্স রিফান্ডও করার ব্যবস্থা করা হোক। গ্রাহকরা অসহায় হয়ে পড়েছে, দ্বারে দ্বারে ঘুরে যাচ্ছে, তাদের কি অপরাধ? আমরা নতুন পুরান ম্যানেজমেন্ট বুঝি না, আমরা আমাদের প্রদত্ত অগ্রিম টাকা ফেরত চাই।’
মো. সবুজ নামের আরেকজন জানান, শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জ বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ভাউচার কিনে দুই লাখ টাকার পণ্য কেনার সুবিধা দেওয়া হয়। সবশেষ এই বছর করোনার কারণে দেওয়া লকডাউনের আগে সামার ভাউচারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পেইন চালায়। এতে অনেক গ্রাহক পণ্যের অর্ডার করেন। যার বেশির ভাগই ছিল বিভিন্ন ধরনের মোটরসাইকেল। তবে তারপর থেকেই পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা বলেছিল এই অর্ডারের পণ্যগুলো ঈদের আগে যে পাঁচ কার্যদিবস লকডাউন শিথিল করা হয়, তখন সরবরাহ করবে, কিন্তু পারেনি। এরপর আরও তিন দফা তারিখ দেওয়া হলেও তারা পণ্য সরবরাহ করছে না। এখন বলছে তারা বাইক দিতে পারবে না। যাদের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল, তারা বাইক সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন নিজেরা আমদানির মাধ্যমে বাইক আনবে, তবে তার জন্য কমপক্ষে ৬০ দিন সময় লাগবে।’
ভোক্তা অধিকারে ১৩ হাজার অভিযোগ
শুধু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরেই ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চার বছরে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকা, প্রিয়শপসহ ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৩১৭টি অভিযোগ দায়ের করেছেন গ্রাহকরা। এসব অভিযোগের মধ্যে ১১ হাজার ৪৩৬টি অভিযোগের নিষ্পত্তিও করেছে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাবলু কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো লোভনীয় অফার দিচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকরাও তাদের সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিপদে পড়ছে। বিভিন্ন ই-কমার্সের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ পাচ্ছি। অনেক অভিযোগের মীমাংসাও করা হয়েছে।
অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ
ই-কমার্সের আড়ালে গ্রাহককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা পাচার ও অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। ধামাকা শপিং ডটকম, নিরাপদ ডটকমসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে অর্থ পাচার ও নামে-বেনামে অন্য খাতে স্থানান্তর করছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। অন্তত ১৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নজরদারিতে রেখেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলারও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও মামলায় এক লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ডাবল ভাউচার’ অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয় ই-অরেঞ্জ। অফারের ভাষ্য ছিল, কেউ এক লাখ টাকা জমা দিলে দুই লাখ টাকার ভাউচার পাবেন। ওই ভাউচার দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবেন। পণ্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের পাওনা দ্বিগুণ অর্থের উল্লেখ মামলায় করেছেন বলে পুলিশের ধারণা।
মামলাটির তদন্তের বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত মালিক হিসেবে মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনের নামই পাওয়া গেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ই-অরেঞ্জ ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। মালিকানার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে ট্রেড লাইসেন্স-সংক্রান্ত কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনার জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে ব্যাংকের হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করে অন্যান্য লেনদেনের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।
নিরাপদ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার খানের বিরুদ্ধে ৮ কোটি টাকার মতো অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে জানিয়েছেন এই অর্থের পরিমাণ আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া ধামাকা শপিংয়ের গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম আদায় করা ৫০ কোটি টাকা অন্য ব্যাংকের হিসাব নম্বরে পাচার করা হয়।
এই জালিয়াতির ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন চিশতীকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।

আমাদের সংবাদটি শেয়ার করুন..

এ পাতার আরও খবর

Sabuj Bangla Tv © All rights reserved- 2011| Developed By

Theme Customized BY WooHostBD