মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (টুইন টাওয়ার) হামলার ২০ বছর আজ ১১ সেপ্টেম্বর। ২০০১ সালের এদিনে নিউইয়র্ক সময় সকাল ৯টায় নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অন্তত ৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
এই হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়।
ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদার জঙ্গিরা এ হামলা চালায়। এতে দুই হাজার ৯৯৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হন ছয় হাজারের বেশি মানুষ।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পাশাপাশি হামলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনেও। এছাড়া ছিনতাই হওয়া আরও একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলে।
দুটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে।
প্রথম বিমানটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় এর অল্পক্ষণ পর, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে।
দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে।
তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ছিল আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশাল এই সদর দপ্তর পেন্টাগন ভবন।
এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার এক মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।
ধারণা করা হয় ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনের ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুদ্ধের অংশ হিসাবে ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন তাদের হামলায় নিহত হয়েছে বলে দাবি মার্কিন বাহিনীর।
নাইন ইলেভনের পর যা হয়েছে
১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলার ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আমেরিকাতে বিমানবন্দর ও বিমানের ভেতর নিরাপত্তা আরও কঠোর করতে ট্রান্সপোর্টেশান সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশান নামে পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। খবর বিবিসি বংলার
নিউইয়র্কে হামলার স্থান, যেখানে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই ‘গ্রাউন্ড জিরো’র ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে সময় লেগেছিল আট মাসেরও বেশি।
ওই স্থানে এখন তৈরি হয়েছে একটি যাদুঘর এবং একটি স্মৃতিসৌধ। ভবনগুলো আবার নির্মিত হয়েছে, তবে ভিন্ন নক্সায়। সেখানে মধ্যমণি হিসাবে নির্মিত হয়েছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা ‘ফ্রিডম টাওয়ার’- যা উচ্চতায় আগের নর্থ টাওয়ারের চেয়েও বেশি। নর্থ টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১,৩৬৮ ফুট আর নতুন ফ্রিডম টাওয়ার ১,৭৭৬ ফুট উঁচু।
পেন্টাগন পুনর্নিমাণে সময় লেগেছিল এক বছরের কিছু কম। ২০০২ সালের অগাস্টের মধ্যে পেন্টাগনের কর্মচারীরা আবার তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান।
এদিকে, নাইন-ইলেভেন হামলার নতুন ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দশক পূর্তিতে এই হামলার আরও বেশকিছু অদেখা ছবি প্রকাশ্যে আনা হবে।
ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্ত প্রকাশ্যে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকেই আশা করছেন, পুনর্মূল্যায়ন করা কাগজপত্র থেকে এ হামলার সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইতোমধ্যে তিনি নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন।