আশাশুনির মানুষ আজও পানি পানিবন্দি, ভরসা ভেলা! আশাশুনির মানুষ আজও পানি পানিবন্দি, ভরসা ভেলা! – Sabuj Bangla Tv
  1. shahinit.mail@gmail.com : admin :
  2. khandakarshahin@gmail.com : সবুজ বাংলা টিভি : সবুজ বাংলা টিভি
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৩ অপরাহ্ন
নোটিশ-
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন টিভি চ্যানেল সবুজবাংলা টিভি এর জেলা/উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

আশাশুনির মানুষ আজও পানি পানিবন্দি, ভরসা ভেলা!

সবুজ বাংলা টিভি
  • প্রকাশ কাল | রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১২৪ পাঠক

ঘুর্ণিঝড় ইয়াশ সব কিছু কেড়ে নিয়েছে প্রতাপনগরবাসীর। বেঁচে থাকা এখন দায় হয়ে পড়েছে এই নগর বাসীর। প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের ৩৫ হাজার মানুষ আজও পানিতে হাবুডুব খাচ্ছে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে মানুষের।

এলাকাবাসি জানিয়েছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াশ প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও কপোতাক্ষ নদ এবং খোলপেটুয়া নদীর নোনা পানি বন্যতলা এবং কুড়িকাহুনিয়া বাঁধ দিয়ে প্রবেশ করে পুরো ইউনিয়নে জোয়ার ভাটা চলছে। ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট, ঘরবাড়ি সব পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগ নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। বানভাসি মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে ব্যবহার করছেন বাঁশ-কাঠের ভেলা, নৌকা এবং যাদের বাড়ি প্রধান সড়কের পাশে তারা বাঁশের সাঁকোয় যাতায়াত করছে। এখানকার প্রধান সড়কেরও একই অবস্থা। এখানকার কয়েক হাজার মানুষ জেলা এবং উপজেলায় যেতে এখনও নৌকায় যাতায়াত করছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ২০ মে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের একমাস পর এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বন্যতলা গ্রামের পরিবার প্রতি ১ হাজার টাকা করে উত্তোল করে রিং বাধ দিয়ে পানি মুক্ত করেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, চলতি বছরের ২৬ মে ঘূণিঝড় ইয়াশের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে আবারও ওই রিং বাঁধটি ভেঙে প্লাবিত হয়। ওই রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ার ভাটা হচ্ছে প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, কল্যাণপুর, নাকনা, সনাতনকাটি, প্রতাপনগর পশ্চিম, প্রতাপনগর পূর্ব এলাকার ৩০ হাজারের অধিক মানুষ আজও জোয়ার মধ্যে ভাটার মধ্যে বসবাস করছে। পানি থাকলে নৌকা অথবা ভেলা দিয়ে কোনো রকম চলাচল করা হয়। ভাটায় পানি চলে গেলে বাড়ি থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়।
এলাকার রাস্তা ঘাট, ঘরবাড়ি সব পানিতে ডুবে রয়েছে। এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট  নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া আমাদের কোনো যাতায়াতের মাধ্যম নেই। বানভাসি মানুষের মধ্যে সুপেয় পানির সংকট বিরাজ করছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জেলা এবং উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যাতায়ত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতাপনগর থেকে আশাশুনি উপজেলায় যাওয়ার এক মাত্র সড়ক ঘড়–ইমহল খাল এলাকার নৌকা চলাচলের মাধ্যমে যাতায়ত করতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে বিপদে পড়তে হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রতাপনগর ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ইসুফ আলী জানিয়েছেন, আম্পানের পর ১০ মাস পানিবন্দি হয়ে ছিলাম। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ দিয়েছিলাম। ঘুর্ণিঝড় ইয়াশের পর চারমাস পানিবন্দি হয়ে আছি। আমাদের যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়ার খুবই সমস্যা। জোয়ার আসলে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করছে। খাটের তলায় ইট দিয়ে কোনো রকম বসবাস করছি। বাড়ি থেকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কখনও গলা সমান পানি ঠেলে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে অনেক পরিবার স্কুল বসবাস করছেন। তারা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি। আমরা ত্রাণ চাই না, দাবী একটাই টেকসই বেঁড়িবাধ চাঁই।
প্রতপনগরের তালতলা এলাকার  ইয়ার আলী জানিয়েছেন, প্রতাপনগরের বর্তমান যে অবস্থা এই রকম খারাপ অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে নৌকা করে অনেক কষ্টে নিয়ে যেতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই চারিদিকে পানি আর পানি। কাজ নেই, খাবার পানির সংকট, বসবাস করা যাচ্ছে না। অনেক লোক এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারেনা। কোথাও যেতে হলে নৌকা যাতায়াত করতে হয়। আমরা সেই পুরোনে দিনে ফিরে গিয়েছি। নৌকাই আমাদের চলাচলের মাধ্যম।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ইয়াসের পর থেকে চারটি মাস এই ইউনিয়নের ৮ হাজার ১১৮ পরিবারের ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকার যথাযথভাবে খাদ্য দিয়েছে। কিন্তু খাদ্য তো বড় কথা না। বাসস্থান বড় কথা। কিন্তু নিয়মিত জোয়ার ভাটা হচ্ছে। মানুষ বাস করবে কিভাবে?
তিনি আরও জানিয়েছেন, এখানকার একটি রাস্তা-ঘাট ভালো নেই। প্রধান সড়কগুলো বড় বড় খালে পরিণত হয়েছে। আশাশুনি সদরের সাথে প্রতাপনগরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কেউ অসুস্থ হলে নৌকা করে পার করে নিয়ে যেতে হয়। এখানকার মানুষের নৌকায়, ভেলা এবং সাঁকোয় চলাচল করতে হচ্ছে। আম্পানের পর রাস্তা-ঘাট মেরামত করা হয়েছিলো। ইয়াশে আবারও এলাক প্লাবিত হয়ে রাস্তা-ঘাট সব নষ্ট হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কী কাজ করে তাদের ডিজাইন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার জানে না। তাদের ইচ্ছামতো কাজ করে চলে যায় বিপদে পড়ে উপকূলের মানুষ।
বাঁধ মজবুদ না হওয়ার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ভাঙে। মানুষ যে কতো কষ্টের মধ্যে সেগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এখানে নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার। দুর্যোগ আসলে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এখানকার অধিকাংশ মানুষ মাছ চাষের সাথে জড়িত। গত কয়েক বছরের জলোচ্ছ্বাসে এখানে ব্যবসা বাণিজ্য কোনো কিছু নেই। এখানকার মানুষ  এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম জানিয়েছেন, খুবই দু:খজনক আম্পানের পর থেকে ওই এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছেন। ঘুর্ণিঝড় ইয়াশের এতদিন পরও এলাকায় জোয়ার-ভাটায় মানুষ পানিবন্দি আছে। তাদের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সহয়তা করা হচ্ছে। প্রতাপনগর পানিতে তলিয়ে থাকার কারণে সড়ক মেরামতের করা যাচ্ছে না। এলাকা পানি আটকাতে কাজ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত পানি বন্ধ হবে এবং মানুষ ভালোভাবে বসবাস করতে পারবেন।

আমাদের সংবাদটি শেয়ার করুন..

এ পাতার আরও খবর

Sabuj Bangla Tv © All rights reserved- 2011| Developed By

Theme Customized BY WooHostBD