তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী পূজা চলা অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী দুই গ্রুপ দফায় দফায় মারামারিতে জড়িয়েছে। এতে দুই গ্রুপের অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর প্রথমে ক্যাম্পাসের গেটের সামনে এরপর ভেতরে দুই গ্রুপের এ মারামারি ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এর আগে অ্যাকাউন্টটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর বিবাদ বাঁধে। এ ঘটনার সূত্র পাতে গত মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাকাউন্টটিং বিভাগের ওই ছেলেকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজির অনুসারী গ্রুপের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সরস্বতী পূজার সময় সন্ধ্যায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ইব্রাহীম ফরাজী গ্রুপের নেতা-কর্মীদের (নৃবিজ্ঞান বিভাগ ছাত্রলীগ) ওপর অতর্কিত হামলা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এরপর প্রধান ফটকের সামনে মারামারি হয়। এসময় সভাপতি ফরাজী গ্রুপের নেতা-কর্মী কম থাকায় তার গ্রুপের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ব্যাচের তাফসির, নিরব, বাতেন বিল্লাহ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গাজী সামসুল হুদা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল বারেকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এতে তাফসিরের মাথা ও নিরবের হাত রক্তাক্ত হয়, তখন তাদের নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাতেন বিল্লাহর দাঁত পড়ে যায়।
পরে সভাপতি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে সাধারণ সম্পাদক আকতারের গ্রুপের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নিয়ামত, সংগীতের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের অনন্ত, কলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মিরাজ হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শেখ রিফাত আব্দুল্লাহ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের তামিম ইকবালসহ অনেকে আহত হন।
এরপর সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন এবং সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে দুই গ্রুপ থেকে অন্তত ১২-১৫ জনের বেশি আহত হন। মারামারির সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তাফসির বলেন, গতকাল আমার এক বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করা হলে আমি তার প্রতিবাদ করি। তারই জেরে এই ঘটনা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, আমাদের এক ছাত্রী বোনকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ক্যাম্পাসে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। প্রয়োজনে ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করতে পারেন। এখানে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজি বলেন, আমরা সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ক্যাম্পাসের বাইরে মারামারি হয়েছে। সেটার রেশ ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল। এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।