মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নে পাঠানবীর খাজা ওসমানের রাজধানী খ্যাত ঐতিহাসিক ওসমানগড় মাঠ বেদখল হচ্ছে। সম্প্রতি এই টিলার পার্শ্ববর্তী ভূমি দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ, সবজি ক্ষেত, গাছ বাগান রোপন করছেন দখলকাররা।

সরকারি এই টিলাভূমিতে প্রস্তাবিত ওসমানগড় উপজেলা অফিস স্থাপনেরও দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। এই ভূমি দখলমুক্ত করতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, পতনউষার ইউনিয়নের শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের গাঁ ঘেষে খাজা উসমানের মাঠ। এই মাঠটি ওসমানগড় মাঠ হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে এই মাঠের চর্তুপাশে দখলের হিড়িক চলছে। সরকারি মাঠের এই ভূমি দখলে নিয়ে কেউ বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। আবার কেউ কেউ বেড়া দিয়ে সবজি ক্ষেত, গাছ বাগান ও বাঁশ রোপন করেছেন। কেউ কেউ নিজেদের ভূমির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সরকারি ভূমি দখল করে নিয়েছেন। এভাবে চারদিকে ভূমি দখলের হিড়িক শুরু হয়েছে।

প্রতিদিন বিকালে মাঠটিতে খেলাধুলা করতে গেলেও শিশু কিশোররা এসব দখলদারদের কারণে রীতিমতো খেলাধুলা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।

পাঠান বীর খাজা উসমান খান লোহানীর সেনানিবাস ছিল পতনঊষারের ওসমানগড়। বর্তমানে সে সেনানিবাসের কোনো চিহ্ন না থাকলেও মাঠের একপাশে রয়েছে গড়। ফলে স্থানটি ওসমানগড় হিসেবে পরিচিত। গড়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে রয়েছে বিশাল দিঘি। সরকারের বিপুল পরিমাণ ভূমিতে দীর্ঘ সময় ধরে এখানে প্রস্তাবিত উসমানগড় উপজেলা অফিস স্থাপনের দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।

বর্তমানে ভূমি দখল হওয়ার কারণে খাজা উসমানের স্মৃতি বিজড়িত মাঠের সঙ্গে ঘরটিও কেটে ফেলা হচ্ছে। মাঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাস্তাঘাটও দখলে চলে গেছে। প্রতিদিন বিকালে স্থানীয় কিশোরেরা মাঠটিতে খেলাধুলা করলেও মাঠের পার্শ্ববর্তী ভূমি দখলকারদের কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী দেলোয়ার হোসেন, রাজু আহমেদ, হায়দর আলী, আব্দুন নুর, শাহীন মিয়া জানান, ঐতিহাসিক ওসমানগড়ের সরকারি টিলাভূমি বেদখল হওয়ার বিষয়ে ইতিপূর্বে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছেও লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় সচেতন মহলকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি ভূমি উদ্ধার প্রয়োজন বলে তারা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজ খাঁ বলেন, এলাকার মানুষের অভিযোগ পেয়ে দলখদারদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাদের কাগজপত্র আছে বলে জানান। তবে এসব কাগজের কোনো বৈধ্যতা না থাকায় ভূমি দখলমুক্ত করে দিতে বলেছি।

প্রস্তাবিত ওসমানগড় উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, উসমানগড়ে উচুঁ নিচু টিলা বেষ্টিত সরকারের বিপুল পরিমাণ ভূমি রয়েছে। সরকারের এই ভূমিতে পাকিস্তান আমল থেকেই আমাদের পূর্বসূরীরা এখানে একটি প্রশাসনিক থানা স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। পরবর্তীতে ওসমানগড় উপজেলা স্থাপনেরও দাবি জানানো হচ্ছে। এখানে একটি উপজেলা কার্যালয় স্থাপিত হলে আশপাশ এলাকার উন্নয়ন তরাম্বিত হবে। তবে বর্তমানে এখানকার বেশকিছু ভূমি বেদখল হয়েছে। এগুলো উদ্ধার প্রয়োজন।

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুয়ান বলেন, ওসমানগড় এলাকায় সরকারি টিলাভূমি দখলের অভিযোগ পেয়েছি। তহশিলদারকে সরেজমিনে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।