লাশের সঙ্গে হওয়া বর্বরতা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানায়: তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। হত্যার পরে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল।
লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, এমন নির্মমতা, কারবালার যে নৃশংসতা তাকেও হার মানিয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দারুল ইহসান মাদরাসার মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে এক জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্টের ফ্যাসিস্টদের পলায়নের দিন সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চলেছিল, মানুষদের ওপর গণহত্যা চলেছিল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের গন্তব্যে দেড় দশকের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শহীদ হয়েছে শ্রমজীবী মানুষ।
তিনি বলেন, শহীদগণ কেবল শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ। একটি পরিবারের মৃত্যু। একটি স্বপ্ন সম্ভাবনার অবসান। তবে আপনাদের সন্তান-স্বজনের শহীদী মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। দেশ আপনাদের শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী। প্রতিটি শহীদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শ্রমজীবীদের অবদান নিয়ে গর্ব করতে পারে। শ্রমজীবী-কর্মজীবী শহীদ পরিবার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্যরা যাতে তাদের স্বজনদের শহীদী মৃত্যু নিয়ে গৌরব করতে পারে। বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার-আশুলিয়ায় কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের হয়তো সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ, তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেনি। তাহলে প্রশ্ন আসে, পোশাক কারখানার শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুর, ভ্যান চালক, অটোরিকশা চালক, ট্রাক চালক, হেলপার, দোকান কিংবা রেস্তোরাঁ কর্মী, অথবা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন সেদিন রাজপথে নেমেছিল? একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি একটি কারণ খুঁজে পাই। এর কারণ একটাই, দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, দেশপ্রেমী গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট যে পালিয়ে গিয়েছে তারা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, কেউ তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাবে না। কারও কোনো ন্যায্য দাবী আদায় হবে না। দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছিল সেদিন, যে ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সক্ষম হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ভূ-লুণ্ঠিত হবে এবং এ কারণেই ফ্যাসিস্টদের সেই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ নির্দ্বিধায় মৃত্যুকে সাহসের সঙ্গে সেদিন আলিঙ্গন করেছিল।
তিনি আরও বলেন, সকল শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পতিত, পলাতক, পরাজিত, বিতাড়িত, ফ্যাসিবাদী অপশক্তি, রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওৎ পেতে রয়েছে। সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশের গণতন্ত্র উত্তোলনের যাত্রা বা পথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হোসান খান, বিএনপির সহপরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. সালাউদ্দিন বাবু উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল গফুর, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নাজমুল হাসান অভি, সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মোহনসহ ঢাকা জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।