শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

মারধর-নির্যাতন, অনুপস্থিত: পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৫ কর্মকর্তা বরখাস্ত

সবুজবাংলা টিভি / ৮ পাঠক
প্রকাশ বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

 অভিযোগ জানাতে আসা ব্যক্তিকে মারধর, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে নির্যাতন, অর্ধস্তন পুলিশ সদস্যের সংসার ভাঙার চেষ্টাসহ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে ডিআইজি থেকে এএসপি পদমর্যাদার পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়।

এসব কর্মকর্তা হলেন- রাজশাহীর সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শিবলী কায়সার, র‌্যাবের অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা, ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এডিসি (এসপি পদে সুপার নিউমারারারি পদোন্নতি পাওয়া) রাজীব দাস ও বরিশাল আরআরএফ এর এএসপি আফজাল হোসেন।

 

এদের মধ্যে এসপি শিবলী কায়সারকে বরখাস্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে আসা ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে।

অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা বরখাস্ত হয়েছেন দুই বছর আগে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন ও তাদের যথাসময়ে আদালতে হাজির না করানোর অভিযোগে।

কনস্টেবলের প্রথম স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া, কুপরামর্শ ও তার সংসার ভাঙার চেষ্টার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন এএসপি আফজাল।

ডিআইজি আনিসুর রহমান ও এডিসি রাজীব দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় পলায়নের অভিযোগে।

এর আগে আরও ২১ কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়কালে এসব কর্মকর্তা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

ডিআইজি আনিসুরকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে।

অপরদিকে ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এডিসি রাজীব ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে আসা ব্যক্তিকে মারধর-

রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) শিবলী কায়সারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে আসা এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, গত ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন রংপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী করিম উদ্দীন ভরসার পুত্রবধূ লিপি খান ভরসা। এর দুদিন পর লিপির পক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রংপুর কোতোয়ালি থানায় শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে এলে তাকে ডিসি শিবলী মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে ১৬ মার্চ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার একটি মামলায় লিপিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রংপুর মহানগর পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় গত ১৩ মার্চ বিকেলে কোতোয়ালি থানায় শিবলী কায়সার লিপি খান ভরসার ম্যানেজার পলাশ হাসানকে মারধর করেন। পলাশ চাঁদা দাবির বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় এজাহার দায়ের করতে এসেছিলেন। ওই এজাহারে শিবলীর নাম রয়েছে খবর শুনে তিনি দ্রুত থানায় আসেন এবং পলাশকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করতে থাকেন। এসময় ওই থানায় কর্তব্যরত প্রহরী নারী কনস্টেবল মৌসুমী আক্তারের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে থানার অফিসার এবং সদস্যরা তাকে (শিবলী কায়সারকে) শান্ত করার চেষ্টা করেন।

সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, বেসামরিক ব্যক্তির প্রতি তার এমন উগ্র আচরণ ও আক্রোশ থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তিনি কর্মরত থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, তার এমন আচরণ অসদাচরণের শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিভাগীয় মামলার তদন্ত কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ থাকায় তাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে সাময়িক বরখাস্ত করার এমন সিদ্ধান্ত বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

প্রশ্নফাঁসে চিকিৎসক গ্রেপ্তার-নির্যাতনের অভিযোগ

র‌্যাব- ১৪তে কর্মরত অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন পাঁচ চিকিৎসককে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন ও নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে।

দুই বছর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে পাঁচ চিকিৎসককে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। তখন তাদের যথাসময়ে আদালতে হাজির না করানো ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জুয়েল চাকমা ঢাকায় সিআইডিতে কর্মরত থাকাকালে তার নেতৃত্বে গত ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর)চিকিৎসক জিল্লুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়েই গ্রেপ্তারের পর তাকে বরিশাল শহরের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গ্রেপ্তারের তিন দিন পর তাকে আদালতে হাজির করানো হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন।

একই পুলিশ কর্মকর্তা চিকিৎসক ইউনুচ উজ্জামানসহ আরও চারজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের পর যথাসময়ে তাদের আদালতে হাজির না করে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারপিট ও ইলেকট্রিক শক দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি চিকিৎসক লুইস সৌরভ সরকার ও শর্মিষ্ঠা মণ্ডলকে গ্রেপ্তার রাখা অবস্থায় মানসিক অত্যাচার করেন এবং ভয়-ভীতি ও জীবননাশের হুমকি দেন বলে প্রজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়।

এছাড়া তাদের স্বীকারোক্তির ভিডিওসহ মামলার গোপনীয় তথ্যাদি ডিজিটাল মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করেন বলে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশে তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, চিকিৎসক নাজিয়া মেহজাবিন তিশা ও মুসতাহিন হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি লাঠি দিয়ে মারার নির্দেশ দেন।

অভিযোগকারীদের আটকের সময় বেআইনিভাবে তাদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি জব্দ তালিকা ছাড়াই হেফাজতে নেন এবং যথাসময়ে সেগুলো ফেরত না দিয়ে দীর্ঘ প্রায় এক বছর নিজের হেফাজতে রাখেন।

এ পুলিশ কর্মকর্তা বরিশাল ও খুলনায় অভিযান পরিচালনার সময় টিভি সাংবাদিককে উপস্থিত রাখেন এবং ঢাকায় সিআইডি অফিসে এনে গভীর রাত পর্যন্ত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার এসব কার্যকলাপ বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি বা অসদাচরণের শামিল বলে প্রজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়। এসব কারণে অতিরিক্ত এসপি জুয়েলকে গত ২২ জুলাই থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা বলা হয়েছে।


এই পাতার আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর