বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

জুলাই আন্দোলনে নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ছিল সরকার টিকিয়ে রাখা
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান ও একমাত্র কারণ ছিল যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। সেদিক বিবেচনা করলে জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত সব অপরাধের নিউক্লিয়াস ছিলেন শেখ হাসিনা।

তার অধীনস্থ অন্যান্য অপরাধীরা বিশ্বাস করতো যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকলে তারাও টিকে থাকবে এবং সব অপরাধ করা সত্ত্বেও তারা নিরাপদে থাকবে এবং আনুগত্যের জন্য পুরস্কৃত হবে। শেখ হাসিনা ছিলেন সব অপরাধীদের প্রাণভোমরা।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের নৃশংস ঘটনাগুলোর সঙ্গে এসব ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিনজনেরর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া আনুষ্ঠিক অভিযোগপত্রে। যে মামলায় আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। যদিও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইতোমধ্যে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

ফরমাল চার্জ মোট ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই ফরমাল চার্জ আদালতে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. মিজানুল ইসলাম। যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

তুলে ধরা তথ্যে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা নির্বাহী বিভাগের প্রধান, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৪ দলীয় জোট প্রধান হিসেবে আসামি শেখ হাসিনা ছিলেন সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সর্বোচ্চ কেন্দ্রবিন্দু। একজন ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত তিনি এককভাবে গ্রহণ করতেন। তার সব রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সমর্থনের মাধ্যমে অধীনস্থরা তাকে সন্তুষ্ট করে তার কৃপাদৃষ্টি লাভ করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতো। জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান ও একমাত্র কারণ ছিল যে কোনেআ মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। সেদিক বিবেচনা করলে জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত সব অপরাধের নিউক্লিয়াস ছিলেন শেখ হাসিনা। তার অধীনস্থ অন্যান্য অপরাধীরা বিশ্বাস করতো যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকলে তারাও টিকে থাকবে এবং সব অপরাধ করা সত্ত্বেও তারা নিরাপদে থাকবে এবং আনুগত্যের জন্য পুরস্কৃত হবে। শেখ হাসিনা ছিলেন সব অপরাধীদের প্রাণভোমরা।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা ও অন্যতম নীতি-নির্ধারক, কুখ্যাত ‘গ্যাং অফ ফোর’ র অন্যতম সদস্য ছিলেন আসামি আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। জুলাই বিপ্লব চলাকালে আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার নেয়া সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হত আসামি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বাধীন ‘কোর কমিটির’ বৈঠকে। যা তার ধানমন্ডির বাসায় অনুষ্ঠিত হতো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রক ছিলেন আসামি আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তৎকালীন আইজিপি আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন পুলিশ প্রধান হিসেবে আইনশৃংখলা বাহিনীর অন্যতম নিয়ন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগী। আন্দোলন দমনে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা তারা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের অংশ হিসেবে সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করতেন।

আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আন্দোলন দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা তদারকি করতে গেলে মোবাইলে ধারনকৃত আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার ভিডিও আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামি চৌধুরী আব্দুল্লা আল মামুন, স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে প্রদর্শন করেন ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল।

এসব ঘটনাসহ জুলাই আন্দোলনের পুরো ঘটনায় যৌথ দায় হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিবন্ধন (১২৭ নং) করা হয়। ওই অভিযোগের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপপরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনার মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় আগামি ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য এবং ৪ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

৫ আগস্টের পর ট্রাইব্যুনালে গত ২৫ জুন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। কারাগারে মৃত্যু হয়েছে এক আসামির।

এই পাতার আরো খবর