ইউরোপে মূল্যস্ফীতি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রগুলোর কাঙ্ক্ষিত সীমায় নেমে এলেও দেশগুলোর নাগরিক ও ভোক্তাদের স্বস্তি মিলছে না। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিগত কয়েক বছরে পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি।
ফলে জীবন-যাপনের খরচ এখনও আগের তুলনায় অনেক বেশি যা বিপাকে ফেলেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও।
ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ভোক্তা পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে গড়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ইউরোজোনে মূল্যস্ফীতি পণ্যের দামের চেয়ে কম ২ শতাংশ। জার্মানিতে এই হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ (ইউরোপীয় মানদণ্ডে), আর দেশটির নিজস্ব হিসেবে ২ শতাংশ।
অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী, ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির লক্ষণ। কিন্তু বাস্তবে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে ইউরোপের সাধারণ মানুষ এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। কাগজে-কলমে মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তাপণ্যের দাম কম থাকলেও বাস্তবতা আলাদা। বাড়িভাড়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্য ও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
আয়ের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম বেশি
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জার্মানিতে ভোক্তা পণ্যের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ, অথচ গড় আয় বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। করোনা মহামারির ধাক্কায় অনেক পরিবার ও ব্যবসার আয় কমে গিয়েছিল। পরে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও দাম বৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি আর থামেনি। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে জ্বালানি খাতে ব্যয় বেড়ে যায় প্রায় অর্ধেক। এরপর থেকে ইউরোপে সব পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে।
কোন খাতে কত খরচ বেড়েছে?
জার্মানির পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেবাখাতে দেশটির ভোক্তা ও নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সংসারের খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। বাড়ি ও ঘরের পুনর্নির্মাণের শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। বয়স্ক নার্সিং খাতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। জ্বালানি খরচ বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভয়াবহ অবস্থা। ২০২০ সালের তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দুগ্ধপণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, কোমল পানীয় সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৭১ শতাংশ। এমনকি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের দামও এখন ৩২ শতাংশ বেশি।
তবে এতকিছুর পরও পোশাক-জুতার দাম বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। আর প্রযুক্তিপণ্য যেমন কম্পিউটার ও টেলিভিশনের দাম বৃদ্ধির বদলে কিছুটা কমেছে।
ইউরোপের দেশে দেশে খরচের ভিন্নতা
ইউরোপে প্রতিটি দেশের নিত্যপণ্য ও সেবাগ্রহীতাদের ভোগের ভিন্নতা রয়েছে। জার্মানিতে পরিবারগুলো বাজেটের বড় অংশ খরচ করে বাসা ভাড়া ও যানবাহনের পেছনে। আর ইতালিতে তুলনামূলক বেশি ব্যয় হয় খাদ্য ও পোশাকে।
আবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো যেমন- ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে জিনিসপত্রের দাম পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণ।
জ্বালানির খরচেও দেশভেদে পার্থক্য রয়েছে। জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গড়ে জ্বালানি খরচ কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। জার্মানিতে তা কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ফ্রান্সে কমেছে ৭ শতাংশ।