সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

ডাকসু নির্বাচন: যে শপথ নিলেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’— এই স্লোগানে গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন ফিরে আসতে না দেওয়াসহ নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার শপথ নিয়েছেন আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ এবং হল সংসদ পরিষদের প্রার্থীরা।
রোববার (০৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম  ও এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ এবং হল সংসদের প্রার্থীরা শপথবাক্য পাঠ করেন।

 

 

দুপুর ১টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীতের পর সবাই শপথবাক্য পাঠ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করান ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। মোটা দাগে আটটি বিষয়ে শপথ নেন ছাত্রদল সমর্থিত হামিম-মায়েদ পরিষদ এবং হল সংসদ পরিষদের প্রার্থীরা।

শপথবাক্য

আমরা শপথ করছি যে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি আনন্দময়, বসবাসযোগ্য এবং নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো এবং ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেকোনো মূল্যে আমাদের ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেব না।

আমরা শপথ করছি যে, যেভাবে আমরা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের রক্তঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, যেভাবে আমাদের অগ্রজেরা ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন—ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনগণের মুক্তির পথ আবারও কোনো কালো শক্তির মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

আমরা শপথ করছি যে, আমাদের বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করবো, যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি তাঁদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।

আমরা শপথ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

আমরা শপথ করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমরা সাইবার বুলিং, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেইক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।

আমরা শপথ করছি যে, আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সম্প্রসারণ, এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রমসমূহ গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়োজিত রাখব।

আমরা শপথ করছি যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে আমরা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখব, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাব।

আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই যে, আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে মনেপ্রাণে ধারণ করি, এবং আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই প্রতিটি শপথ বাস্তবায়িত হবে, ইনশাআল্লাহ।

শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মী, সমর্থকরা।

এই পাতার আরো খবর