মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৪ অপরাহ্ন

যমুনার ভাঙনে দিশেহারা শাহজাদপুরের ৯ গ্রামের মানুষ
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
বর্ষা-শরৎ শেষে হেমন্ত ঋতুর ১৫ দিন চলে গেছে- এমন শুষ্ক মৌসুমেও যমুনা নদীর ভাঙন চলছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নয় গ্রামের মানুষ।

চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এসব অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীনের পথে রয়েছে ধীতপুর কুরসি হাট-বাজারসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, বারপাখিয়া ও লোহিন্দাকান্দি এবং গালা ইউনিয়নের বৃহাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রামে শুষ্ক মৌসুমেও চলছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের তাণ্ডবে এসব গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, দুটি মসজিদ, দুটি মাদরাসা ও একটি কবরস্থান যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়া ধীতপুর-কুরসি গ্রামের দুটি হাট-বাজারের অর্ধেক অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনকবলিত জনতা বলছেন, ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কয়েকদিনের মধ্যে এ হাট দুটি যমুনায় বিলীন হবে। তারা বলেন, যেখানে গত এক মাস আগেও বাড়িঘর ছিল, এখন সেখানে অথৈ পানি।

ধীতপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক, আসমা খাতুন, চম্পা বেগমসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনাপারের এসব জমিতে ধান, বাদাম ও শীতকালীন সবজি আবাদ হয়ে থাকে। ১৯৮৮ সাল থেকে এখানে নদীভাঙন চলছে। আমরা ১০ থেকে ১২ দফায় ভাঙনের কবলে পড়েছি।
কমেলা খাতুন, বাতেন বেপারি, আব্দুর রাজ্জাক সরদার, আব্দুস সামাদ ও মনোয়ারা বেগম বলেন, এ পর্যন্ত ১২/১৪ বার বাড়িঘর ও ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা। এখন তাদের রাত কাটে ভাঙন আতঙ্কে।

সোনাতনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামছুল হক বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারপাখিয়া পর্যন্ত পাঁচ/ছয়টি গ্রামের প্রায় চার/পাঁচশ বাড়িঘর, দুটি মসজিদ, দুটি মাদরাসা ও একটি কবরস্থান যমুনা নদীতে চলে গেছে। ভাঙনরোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাঁচ/ছয় বছরে এ দুটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কমপক্ষে ২৭০ হেক্টর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক মাসের ভাঙনে ৭০ থেকে ১০০ হেক্টর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হওয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর বিপরীত পাশেই ৮০/৯০ হেক্টর বালুর চর জেগে উঠেছে। কিন্তু তা এখনও আবাদযোগ্য হয়ে ওঠেনি।

যমুনার ভাঙন তাণ্ডবে এ ইউনিয়নের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। যে সব ফসলি জমি ভেঙে গেছে, সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিকভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রণোদনা দিয়ে এ ক্ষতি কিছুটা লাঘবে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলেও জানান তিনি।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, কুরসি-ধীতপুরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা ভাঙন এলাকায় দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এই পাতার আরো খবর