সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

পোশাকের কার্যাদেশ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গ্যাসসংকট ও বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের  নতুন অনেক কার্যাদেশ প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশে চলে যাচ্ছে। বর্তমান সংকট অব্যাহত থাকলে এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া খাতসংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষ অবকাঠামো গড়ে তোলা ছাড়া পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) আয়োজিত ‘বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন পাভেল।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বারবার অবরোধ, লোডশেডিং এবং গ্যাসসংকটের কারণে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শেষ করতে পারছে না। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নির্ধারিত সময়সীমা রক্ষা করতে অনেক রপ্তানিকারককে বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বিমানপথে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। এতে রপ্তানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, ‘আমরা এখন এক কঠিন সময় পার করছি। দেশের সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। যদি দ্রুত সমাধান না আসে, এই সংকট আরো গভীর হবে।’ বিজিবিএর মহাসচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘গ্যাসসংকট ও প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এতে সময়মতো পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না, ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হচ্ছেন বিমানপথে পণ্য পাঠাতে, যা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।’ তিনি সরকারের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়নের আহবান জানান।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘টেক্সটাইল ও পোশাক খাত জাতীয় রপ্তানির ৮৫ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। তবু আমরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাচ্ছি না। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

’ তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। নতুন অর্ডারের প্রবাহেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।’

বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, বিমানবন্দরের জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক বাধা সব মিলিয়ে গার্মেন্ট খাত এখন সংকট ব্যবস্থাপনার খাতে পরিণত হয়েছে।’ তিনি শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে ৫০ জনের পরিবর্তে ২০ জন শ্রমিকের সীমা নির্ধারণের সরকারি সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘আমেরিকার শুল্কনীতি ও শ্রমিক ইস্যুর জটিলতার কারণে রপ্তানি অর্ডারও প্রভাবিত হচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দল ক্ষমতায় এলে আমরা এলডিসি উত্তরণের সময় বাড়ানোর জন্য কাজ করব, যাতে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতির সুযোগ পান।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাংক খাত থেকে কিছু ব্যবসায়ী অর্থ লুট করেছেন, যার ফলে আর্থিক খাত নাজুক হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের ‘ফিল গুড’ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি।’

খসরু আরো বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানিবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তুলব। এ জন্য অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া সহজ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

প্রেস সচিব উন্মাদের মতো কথা বলেন—বিটিএমএ সভাপতি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ‘উন্মাদের মতো কথা বলেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবুর মিটিংয়ের শিডিউল না পাওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত বিজিএমইএ সভাপতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ পেল না। তাহলে আপনি এ দায়িত্ব নিলেন কেন?’

তিনি আরো বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যেসব খেলাধুলা হয়েছে, সেটা এখন আবার শুরু হয়েছে।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে উদ্দেশ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সবাই মরে যাচ্ছি, ফ্যাক্টরি বন্ধ হচ্ছে, মানুষ চাকরিচ্যুত হচ্ছে। আপনি কি দেখেন না এসব?’

এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘যেখানে এয়ারপোর্ট পোড়ে, সেখানে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দেবে নাকি? এর ইনটেনজিবল ক্ষতি অনেক বেশি।’ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন দিয়ে আমাদের মুক্তি দিন।’

অনুষ্ঠানে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘তাঁর একটা পেজ (ফেসবুক পেজ) আছে, উল্টাপাল্টা কথা বলে মানুষকে বিব্রত করেন। সঠিক লোক যদি সঠিক জায়গায় না যায়, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্তও হবে না।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

এই পাতার আরো খবর