এ ছাড়া আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় কবে ঘোষণা করা হবে, তা জানাতে আগামী ১৩ নভেম্বর তারিখ রাখা হয়েছে। এই মামলার অন্য দুজন আসামি হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জনমনে উদ্বেগ আলোচনা গুঞ্জন
- প্রকাশকাল ০৪:০৩:৩২ এএম, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫ ২ পাঠক
তাদের লক্ষ্য, সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা। এ বিষয়ে ওপার বাংলার সংবাদপত্র আনন্দবাজারের সংবাদ শিরোনাম, ‘সোমবার থেকে রাস্তায় নামছে আওয়ামী লীগ’। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব প্রচারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। তবে ক্ষমতাচ্যুতদের এই হুমকির বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক হুমকিকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
পুলিশপ্রধান যা বলেছেন : কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউনের ডাক দেওয়া সম্পর্কে গতকাল সাংবাদিকরা আইজিপি বাহারুল আলমের দৃিষ্ট আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে গেছে গণমানুষের প্রতিরোধে। গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তাদের উত্খাত করা হয়েছে। এই পলাতক ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী আবারও যদি বিশৃঙ্খলা বা অপরাধ করার চেষ্টা করে, তাহলে জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে এই নয় যে সামাজিক মাধ্যমে কাউকে গালাগাল করা। অথবা কারো রাস্তা বন্ধ করে রাখা। এগুলো প্রতিরোধে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ ও সহায়ক অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তো আছেই।’
র্যাবের মুখপাত্র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গতকাল বিকেলে বলেন, ‘১৩ তারিখের বিষয়টি অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাইবার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সারা দেশে র্যাবের ১৫টি ইউনিট সতর্ক রয়েছে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে আমরা কাজ করছি।’
তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলমান। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ককটেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কাকরাইল এলাকায় ‘সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে’র সামনের সড়কে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। একটি ককটেল চার্চের প্রধান ফটকে বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি চার্চের ভেতরে অবিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিটে অবিস্ফোরিত ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করে। একই রাতে রাজধানীর ফার্মগেট ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
কাকরাইলে ককটেল হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুশান্ত বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেল থেকে দুটি ককটেল চার্চের সামনে নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। একটি গেটে বিস্ফোরণ হয়। অন্যটি চার্চের গেটের ভেতরের ঝোপঝাড় থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বোম ডিসপোজাল ইউনিট সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে। ঘটনার পর আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
এ ছাড়া ফার্মগেট এলাকায় ককটেল হামলার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য, এ এলাকায় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
জামায়াতসহ ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক : এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল দুপুর ১২টায় জাগপা ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে আন্দোলনরত আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাগপা সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধানের সভাপতিত্বে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন ও যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার চৌধুরী ও সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হাক্কানি ও নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবু নাসের নূর নবী জনি ও অর্থ সম্পাদক রিয়াজ হোসাইন।
তাঁরা বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসার জন্য বিএনপিসহ সবাইকে আহবান জানিয়েছি, কিন্তু বিএনপি আমাদের আহ্বানে আলোচনায় বসতে রাজি নয়। তাহলে বিএনপি আহবান জানাক, দেশ জাতি জনগণের স্বার্থে আমরা আলোচনায় অংশ নেব। কিন্তু কালক্ষেপণ করে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের দিন নেওয়ার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। জনগণের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ১১ তারিখ আমাদের জনসভা থেকে কঠোরতম কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
আন্দোলনরত দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের অবস্থান : জুলাই সনদ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ গতকাল শনিবার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহবান জানানো হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। দলগুলো সে ধরনের দিকনির্দেশনা না দিতে পারলে সরকার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।’
তারেক রহমানের সতর্কবার্তা : এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কতার বার্তা উঠে এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিএনপির আয়োজনে হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ যদি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে তাহলে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে। ফ্যাসিবাদী আমলে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের কেউ কেউ যে উপায়ে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল, পতিত পরাজিত অপশক্তিও বর্তমানে একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে কি না, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি সরকার ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আহবান জানাতে চাই।’ তিনি কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয় বলেও মন্তব্য মন্তব্য করেন।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ













