ঢাকা ০৪:০৯ পিএম, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্ত্রাসীদের ধরতে রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেপ্তার ৬৭

সবুজবাংলা টিভি ডটকম-
  • প্রকাশকাল ০৬:৪৯:৫০ এএম, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২ পাঠক
সবুজবাংলা টিভি এর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএন।

রোববার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে সারাদিন রাজশাহীর বাঘা, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাঁকনের ‘কাঁকন বাহিনী’র সদস্য। অভিযানে অস্ত্র, মোটরসাইকেল, মাদকদ্রব্য, নৌকা ও স্পিডবোটসহ নানা কিছু জব্দ করা হয়েছে।

গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হন। পরবর্তীতে কাঁকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাঁকনসহ বাহিনীর সদস্যদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়।

এ চরাঞ্চলে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। রোববার ভোরে তাদের দমনে পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের এক হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন।

পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মার চরে কাঁকন বাহিনী ছাড়াও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে মণ্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনী। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলে খুন, চরের চাষি ও জেলেদের হত্যা, চরের জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্র পাচার, বেআইনি অস্ত্র দখলে রাখা, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ও সর্বহারাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল এবং ডাকাতি। এতে অশান্ত থাকে চরাঞ্চল।

অভিযান শেষে রোববার বিকেলে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি জানান, অভিযানে মোট ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চল থেকে। অন্য নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল থেকে। গ্রেপ্তার করা ৬৭ জন কাঁকন বাহিনীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। এর মধ্যে কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন।

ডিআইজি জানান, অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, দুটি গুলির খোসা, ২৪টি হাঁসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছুরি, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, একটি লোহার পাইপ, একটি টিউবওয়েল, পাঁচটি মোটরসাইকেল, ২০ বোতল ফেনসিডিল, ৮০০ গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে।

আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চর থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, একটি স্পিডবোট, অস্ত্র রাখার একটি সিলিন্ডার, দুটি তাঁবু ও পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই অভিযানই শেষ নয়। অভিযান শুরু হলো। এটি থেমে যাবে না। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে। সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সন্ত্রাসীদের ধরতে রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেপ্তার ৬৭

প্রকাশকাল ০৬:৪৯:৫০ এএম, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএন।

রোববার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে সারাদিন রাজশাহীর বাঘা, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাঁকনের ‘কাঁকন বাহিনী’র সদস্য। অভিযানে অস্ত্র, মোটরসাইকেল, মাদকদ্রব্য, নৌকা ও স্পিডবোটসহ নানা কিছু জব্দ করা হয়েছে।

গত ২৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজার নিচ খানপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হন। পরবর্তীতে কাঁকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাঁকনসহ বাহিনীর সদস্যদের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা হয়।

এ চরাঞ্চলে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। রোববার ভোরে তাদের দমনে পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। এতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিমের এক হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন।

পুলিশ জানিয়েছে, পদ্মার চরে কাঁকন বাহিনী ছাড়াও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে মণ্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনী। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলে খুন, চরের চাষি ও জেলেদের হত্যা, চরের জমি দখল, বাথানের রাখাল ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ও অস্ত্র পাচার, বেআইনি অস্ত্র দখলে রাখা, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ও সর্বহারাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, পদ্মার চরের খড়ের মাঠ দখল এবং ডাকাতি। এতে অশান্ত থাকে চরাঞ্চল।

অভিযান শেষে রোববার বিকেলে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি জানান, অভিযানে মোট ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চল থেকে। অন্য নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল থেকে। গ্রেপ্তার করা ৬৭ জন কাঁকন বাহিনীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। এর মধ্যে কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন।

ডিআইজি জানান, অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, দুটি গুলির খোসা, ২৪টি হাঁসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছুরি, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, একটি লোহার পাইপ, একটি টিউবওয়েল, পাঁচটি মোটরসাইকেল, ২০ বোতল ফেনসিডিল, ৮০০ গ্রাম গাঁজা ও ৫০ পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে।

আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চর থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, একটি স্পিডবোট, অস্ত্র রাখার একটি সিলিন্ডার, দুটি তাঁবু ও পাঁচটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই অভিযানই শেষ নয়। অভিযান শুরু হলো। এটি থেমে যাবে না। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে। সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।