মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ন

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বিপর্যয়ে বেসরকারি খাত
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
ভোটের আগে কয়েক মাস দেশের অর্থনীতি কেমন হতে পারে- তা নিয়ে ‘সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি’ তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।

সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি তার সর্বশেষ ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুকে (অক্টোবর, ২০২৫) বলেছে, সাম্প্রতিক প্রবণতায় মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হলেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ ও বিনিয়োগে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সামনের মাসগুলোতে অর্থনীতিতে নির্বাচনসংক্রান্ত কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে। এটি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন নিয়েও এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগসহ অর্থনীতির সব খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে আরও অস্থিরতা বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে ইকনোমিক আপডেট অংশে জিইডি গত কয়েক মাসের সামষ্টিক অর্থনীতির চারটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছে। এগুলো হলো : (১) সরকারের তৎপরতার কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে; (২) মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলেও রপ্তানিতে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে; (৩) ব্যাংক আমানত বাড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণ কমছে এবং (৪) প্রশাসনিক সংস্কারের কারণে রাজস্ব আয়ে গতি ফিরেছে।

ইকনোমিক আউটলুক অংশে জিইডি নির্বাচনি প্রসঙ্গটি তুলেছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু সংস্কার উদ্যোগের কারণে আমানতকারীরা ব্যাংকমুখী হচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কারণেও অনেকের কাছে ব্যাংক-আমানত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানত বৃদ্ধির পেছনে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তবে ব্যাংক আমানত বাড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণ ও বিনিয়োগে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এজন্য সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিকে দায়ী করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হলেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ ও বিনিয়োগ কমেছে।

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন একটি নীতি- যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি-নির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখতে পছন্দ করে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমতে থাকে। বাজারেও টাকার প্রবাহ হ্রাস পায়। মূল্যস্ফীতি কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার এই নীতি গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

জিইডির প্রতিবেদনটি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেওয়ায় সেখানে আবারও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।

এ ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীরা ভোটারদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করবেন। এটি অনুৎপাদনশীল ব্যয়। এখানে কালো-টাকা সাদা টাকা সব ধরনের অর্থই যাবে। এতে করে নগদ টাকার প্রবাহও বেড়ে যাবে। এটি সাময়িক ভোগ বৃদ্ধি করলেও মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। একদিকে ঋণ- বিনিয়োগে স্থবিরতা, অপরদিকে অনুৎপাদনশীল খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই চিফ ইকানোমিস্ট।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এই পাতার আরো খবর