সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

অন্য দেশের ‘সরকার বদলে’ মার্কিন নীতির সমাপ্তি ঘটেছে: তুলসী গ্যাবার্ড
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অন্য দেশের সরকার পরিবর্তন ও রাষ্ট্রগঠনের (রেজিম চেঞ্জ) নীতি অনুসরণ করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে সেই নীতির অবসান ঘটেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলন ‘মানামা সংলাপে’ তিনি এ কথা জানান। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সিকিউরিটি স্টাডিজ (আইআইএসএস) আয়োজিত এ সংলাপে অংশ নিয়ে গ্যাবার্ড বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন আর অন্য দেশে সরকার উৎখাত বা নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছি না।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে দেওয়া বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিস্তারে মনোযোগী থাকলেও, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তা রূপ নিয়েছে ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’ কেন্দ্রিক নতুন কৌশলে।

গ্যাবার্ড বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এক ব্যর্থ চক্রে আবদ্ধ ছিল যেখানে অন্য দেশের সরকার পরিবর্তন, সেখানে নিজেদের শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া, এবং সীমিত জ্ঞান নিয়েই একের পর এক সংঘাতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এতে মিত্রের চেয়ে শত্রুই বেড়েছে।

হাওয়াইয়ের সাবেক কংগ্রেস সদস্য এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক কর্মকর্তা গ্যাবার্ড আরও বলেন, এই ব্যর্থ নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে, অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, এবং আইএসআইএসের মতো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে।

তুলসী গ্যাবার্ডের এই মূল্যায়ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সেই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে তিনি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার পর শুরু হওয়া মার্কিন যুদ্ধনীতির পুনর্মূল্যায়ন করেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি হয়, যা বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২১ সালে শেষ হয়।

এ ছাড়া সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান নতুন অধ্যায় তৈরি করে। উল্লেখ্য, আল-কায়েদার সাবেক সদস্য আল-শারা একসময় ইরাকে মার্কিন বাহিনীর হাতে বন্দী ছিলেন।

তবে গ্যাবার্ড দক্ষিণ আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের নৌবাহিনী মোতায়েন, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হামলা, কিংবা ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের নতুন নীতি এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন গ্যাবার্ড। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, আর ইরান সম্প্রতি তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে।

তুলসী গ্যাবার্ড আরও বলেন, আগামী পথ সহজ নয়, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিবর্তনের পথে অটল এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এই পাতার আরো খবর