তাঁর নাম অধ্যাপক ডা. রজত কুমার বিশ্বাস, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও অধ্যাপনা শেষে অবসর নিলেও রোগীরা দেননি ছুটি। প্রতিদিন তাই চেম্বারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকেন তারা। এই চিকিৎসকের কাছে হাতে-কলমে শিখে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন অনেক গাইনোকোলজিস্ট। তাঁরা যখন ডা. রজত কুমার বিশ্বাসের প্রেসক্রিপশন দেখেন, তখন দ্রুত রোগ নির্ণয় কিংবা ওষুধ নির্বাচনের বিষয় দেখে নতুন কোনও পরামর্শ দেওয়ার সাহস পান না।
পুরুষ ডাক্তারের নারী রোগী
- প্রকাশকাল ০৫:২৪:৩২ এএম, রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ২১ পাঠক
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী ৪ নম্বর ওয়ার্ড দত্ত পাড়ার শিক্ষানুরাগী প্রয়াত মনোরঞ্জন বিশ্বাসের পাঁচ পুত্র, চার কন্যার মধ্যে ডা. রজত প্রথম সন্তান। শৈশব থেকেই ছিলেন মেধাবী। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বরাবরই ছিলেন প্রথম। উচ্চ মাধ্যমিকেও ছিল মেধার স্বাক্ষর। কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই কৃতি ছাত্রের কথা এখনও উঠে আসে ক্লাসরুমে, সামাজিক অনুষ্ঠানে, পাড়ার আড্ডায়।
মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গবেষণা ও চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালনকারী প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) চট্টগ্রাম শাখার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি দিয়ে যাচ্ছেন পরামর্শ।
দত্তপাড়া সুহৃদ ক্লাবের সভাপতি প্রভাস চক্রবর্ত্তী বলেন, তাঁর অন্যান্য গুণের মধ্যে আছে ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম। বিপদে-আপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সাধারণ মানুষের কাছে।
শুধু স্বামী নন, স্ত্রী নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. শিউলী মজুমদারও দারুণ ব্যস্ত তাঁর পেশায়। ছেলে শাশ্বত বিশ্বাস চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতে অনুরক্ত। বোন জামাই অধ্যাপক ডা. পঞ্চানন দাশ, ডা. প্রতীক সেন, ভাগনি ডা. একা সরকার, ডা. প্রান্ত সরকারও হেঁটেছেন তাঁর দেখানো পথে।
ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবির) গবেষণা বলছে, এমবিবিএস পাস করা ৯১ শতাংশ নারী চিকিৎসক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধিত চিকিৎসকদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬৯৭ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, নারী চিকিৎসকদের ৯৬ শতাংশের বিশেষ দক্ষতা স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিষয়ে। সেক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা কম।
এমন প্রেক্ষাপটে পুরুষ চিকিৎসক হিসেবে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় ক্যারিয়ার গড়ার ভাবনা কিভাবে এলো-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রজত কুমার বিশ্বাস স্মরণ করেন দেশে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার কিংবদন্তিতুল্য চিকিৎসক প্রয়াত অধ্যাপক এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী (টি এ চৌধুরী), প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খান, ডা. জোহরা বেগম কাজী, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শায়লা খাতুন, অধ্যাপিকা ডা. সৈয়দা নুরজাহান ভূঁইয়ার মতো গুণী চিকিৎসকদের।
তিনি বলেন, একলাম্পশিয়া ও প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ মাতৃমৃত্যুর বড় কারণ। পাশাপাশি বন্ধ্যাত্ব নিয়ে একতরফা নারীদেরই নিগ্রহের শিকার হতে হয় বেশি। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং হলেও এটাকে গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করি। একজন চিকিৎসকের কাছে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়াই প্রধান কাজ। এখানে রোগী পুরুষ নাকি নারী-সেটা বিবেচ্য নয়। এখন নারীরা প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন।
অধ্যাপক ডা. রজত কুমার বিশ্বাসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে-এ কথা জানালেন গাইনি চিকিৎসকরাই।
























