ঢাকা ০২:৫২ পিএম, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে ফেরত পাঠানো হলো পুশ-ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা সোনালীকে

সবুজবাংলা টিভি ডটকম-
  • প্রকাশকাল ০৫:৩০:৪৭ এএম, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২ পাঠক
সবুজবাংলা টিভি এর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
পুশ-ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালীকে তার শিশুসন্তানসহ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে নিজ দেশে তিনি ফিরতে পারলেও তার স্বামীসহ বাকি ৪ জন ফিরতে পারলেন না।

শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) রাত পৌনে আটটার দিকে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এই হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন সেন্টার দিয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় তার সাথে থাকা তার শিশু সন্তান মো. সাব্বিরকেও (৮) হস্তান্তর করা হয়। তবে সোনালীর স্বামী ও বাকি ৪ জনকে আবারো জিরো পয়েন্ট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফিরিয়ে আনা হয়।

মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার, ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ, ভারতের ১১৯ ব্যাটালিয়ন উপ অধিনায়ক ফাওয়ান রানা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দর্জিপাড়া পাইকড় এলাকার বাসিন্দা সোনালী খাতুন হস্তান্তরের সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

গত ২৫ জুন কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ জোরপূর্বক ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে। পরে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের আটক করে এবং ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন ও তার দুই নাবালক শিশু। মানবিক বিবেচনায় আদালত ২ ডিসেম্বর তাদের স্থানীয়দের জিম্মায় দেন এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পুশইন করার ফলে সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করে।

উভয় দেশের আলোচনার ভিত্তিতে সোনালী খাতুন এবং তার ৮ বছরের সন্তান মো. সাব্বির শেখকে শুক্রবার সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিএসএফের এ ধরনের অমানবিক পুশ-ইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকট তৈরি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজিবি দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ভারতে ফেরত পাঠানো হলো পুশ-ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা সোনালীকে

প্রকাশকাল ০৫:৩০:৪৭ এএম, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
পুশ-ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালীকে তার শিশুসন্তানসহ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে নিজ দেশে তিনি ফিরতে পারলেও তার স্বামীসহ বাকি ৪ জন ফিরতে পারলেন না।

শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) রাত পৌনে আটটার দিকে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এই হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন সেন্টার দিয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় তার সাথে থাকা তার শিশু সন্তান মো. সাব্বিরকেও (৮) হস্তান্তর করা হয়। তবে সোনালীর স্বামী ও বাকি ৪ জনকে আবারো জিরো পয়েন্ট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফিরিয়ে আনা হয়।

মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার, ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ, ভারতের ১১৯ ব্যাটালিয়ন উপ অধিনায়ক ফাওয়ান রানা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দর্জিপাড়া পাইকড় এলাকার বাসিন্দা সোনালী খাতুন হস্তান্তরের সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

গত ২৫ জুন কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ জোরপূর্বক ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে। পরে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের আটক করে এবং ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন ও তার দুই নাবালক শিশু। মানবিক বিবেচনায় আদালত ২ ডিসেম্বর তাদের স্থানীয়দের জিম্মায় দেন এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পুশইন করার ফলে সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করে।

উভয় দেশের আলোচনার ভিত্তিতে সোনালী খাতুন এবং তার ৮ বছরের সন্তান মো. সাব্বির শেখকে শুক্রবার সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিএসএফের এ ধরনের অমানবিক পুশ-ইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকট তৈরি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজিবি দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।