ঢাকা ০৮:২৩ পিএম, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন: উপদেষ্টা

সবুজবাংলা টিভি ডটকম-
  • প্রকাশকাল ০৪:৩১:৫০ এএম, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ৭ পাঠক
সবুজবাংলা টিভি এর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সরকারি পর্যায়ে ঝুঁকি মোকাবিলার তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নারী উদ্যোক্তাসহ সকল উদ্যোক্তার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) লেকশোর হোটেলে ‘ভয়েসেস ফর চেঞ্জ: পুটিং ক্লাইমেট অ্যাকশন, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যান্ড এসএমই ইন বাংলাদেশিজ পাবলিক পলিসি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিন বলেন, নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি মানে শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়; বরং তাদের দৃশ্যমানতা বাড়ানোই হবে মূল লক্ষ্য। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন-যদিও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে, তারপরও জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও সুযোগের পরিধি এখনো যথেষ্ট নয়। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্যোগ তাদেরকেই নিতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উৎস, যার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই নারীদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করে। একজন নারী উদ্যোক্তা নিজের সঙ্গে আরও কয়েকজন নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেন। নারীর আর্থিক শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নারীরা ঋণ নিলে তা পরিশোধ করেন-এটা প্রমাণিত সত্য। তাই নারীদের ঋণ সহায়তা বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, ভূমিকম্প বড় আঘাত হয়তো একবার দেয়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিদিনের সমস্যা। বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণে বড় অবদান না রাখলেও ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে আমরা প্রথম সাতটি দেশের একটি। কপ–৩০-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্রাজিলের বেলেমে জলবায়ু আলোচনায় নারীদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আসেনি।

ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব নয় এমন কৃষি ও পশুপালন পদ্ধতিতে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গবাদিপশুর খাদ্যাভ্যাস উন্নয়নের মাধ্যমে মিথেন কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও শিল্পায়িত দেশসমূহের ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইভস্টক প্রোডাকশনের কারণে অধিক হারে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে মৎস্য খাত। এর প্রভাবে নদী ও সাগরে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি সমুদ্রের বহু এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিজনিত অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, যা মৎস্যসম্পদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও উল্লেখ করেন ফরিদা আখতার।

বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পের (এসএমই) কার্যকর অংশগ্রহণ এবং এসব খাতে টেকসই নীতি সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি গঠনে নারীদের অবদান এবং এসএমই খাতের সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা।

উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুশফিকুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলের ডেপুটি হেড মিস বাইবা জারিনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন: উপদেষ্টা

প্রকাশকাল ০৪:৩১:৫০ এএম, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সরকারি পর্যায়ে ঝুঁকি মোকাবিলার তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নারী উদ্যোক্তাসহ সকল উদ্যোক্তার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) লেকশোর হোটেলে ‘ভয়েসেস ফর চেঞ্জ: পুটিং ক্লাইমেট অ্যাকশন, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যান্ড এসএমই ইন বাংলাদেশিজ পাবলিক পলিসি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিন বলেন, নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি মানে শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়; বরং তাদের দৃশ্যমানতা বাড়ানোই হবে মূল লক্ষ্য। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন-যদিও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে, তারপরও জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও সুযোগের পরিধি এখনো যথেষ্ট নয়। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্যোগ তাদেরকেই নিতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উৎস, যার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই নারীদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করে। একজন নারী উদ্যোক্তা নিজের সঙ্গে আরও কয়েকজন নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেন। নারীর আর্থিক শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নারীরা ঋণ নিলে তা পরিশোধ করেন-এটা প্রমাণিত সত্য। তাই নারীদের ঋণ সহায়তা বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, ভূমিকম্প বড় আঘাত হয়তো একবার দেয়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিদিনের সমস্যা। বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণে বড় অবদান না রাখলেও ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে আমরা প্রথম সাতটি দেশের একটি। কপ–৩০-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্রাজিলের বেলেমে জলবায়ু আলোচনায় নারীদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আসেনি।

ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব নয় এমন কৃষি ও পশুপালন পদ্ধতিতে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গবাদিপশুর খাদ্যাভ্যাস উন্নয়নের মাধ্যমে মিথেন কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও শিল্পায়িত দেশসমূহের ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইভস্টক প্রোডাকশনের কারণে অধিক হারে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে মৎস্য খাত। এর প্রভাবে নদী ও সাগরে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি সমুদ্রের বহু এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিজনিত অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, যা মৎস্যসম্পদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও উল্লেখ করেন ফরিদা আখতার।

বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পের (এসএমই) কার্যকর অংশগ্রহণ এবং এসব খাতে টেকসই নীতি সহায়তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি গঠনে নারীদের অবদান এবং এসএমই খাতের সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা।

উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুশফিকুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলের ডেপুটি হেড মিস বাইবা জারিনা।