হারিয়ে যাচ্ছে হাজং ভাষা, প্রাক-প্রাথমিকে সংরক্ষণের দাবি হারিয়ে যাচ্ছে হাজং ভাষা, প্রাক-প্রাথমিকে সংরক্ষণের দাবি – Sabuj Bangla Tv
  1. shahinit.mail@gmail.com : admin :
  2. khandakarshahin@gmail.com : সবুজ বাংলা টিভি : সবুজ বাংলা টিভি
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
নোটিশ-
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন টিভি চ্যানেল সবুজবাংলা টিভি এর জেলা/উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

হারিয়ে যাচ্ছে হাজং ভাষা, প্রাক-প্রাথমিকে সংরক্ষণের দাবি

সবুজ বাংলা টিভি
  • প্রকাশ কাল | বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৩৩ পাঠক

‘মায়ের ভাষায় সবাই কথা বলতে চায়, এতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্য ও তৃপ্তি বোধ করে। আমরাও চাই আমাদের সন্তানরা তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলুক।

’ এমন দাবি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার বগাঝড়া গ্রামের বাসিন্দা বিখ্যাত হাজং শিল্পী অনিমেষ রায়সহ এই অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ।

 

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষণের অভাবে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের হাজং ভাষা। এতে একটি সম্প্রদায়ের ভাষা বিলুপ্তি ঘটছে, তা হতে পারে না। তবে আমি একজন শিল্পী হিসেবে চেষ্টা করছি হাজং ভাষায় গান পরিবেশ করে নতুন প্রজন্মের কাছে এই ভাষাটির পরিচয় করিয়ে দিতে। আশা করছি সরকারিভাবে হাজং ভাষা সংরক্ষণে সরকার অতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করবে।

সূত্রমতে, হাজং বাংলাদেশের একটি নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলার পাহাড়ি এলাকায় তাদের আদি বাস। তবে বর্তমানে অনেক হাজং সমতল ভূমিতেও বসবাস করছেন। এছাড়াও সিলেটের সুনামগঞ্জ অঞ্চলেও রয়েছে এই সম্প্রদায়ের বসবাস। কিন্তু ক্ষুদ্র এই নৃগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। শুধু মৌখিকভাবে এই ভাষার প্রচলন রয়েছে। ফলে সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন এই ভাষাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এ অবস্থায় প্রাক-প্রাথমিকে এই ভাষাটি পুস্তক আকারে প্রকাশিত হলে হারিয়ে যাওয়া এই ভাষাটি সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার চারুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানসী হাজং।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাজং ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই। আগে এই ভাষার কিছু শব্দ প্রচলিত ছিল। তখন হাজংরা একসঙ্গে পাহাড়ে বসবাস করত। কিন্তু বর্তমানে কালের পরিক্রমায় বাঙালিদের সঙ্গে বসবাস, জীবনধারণের প্রয়োজনে এবং সরকারিভাবে এই ভাষা সংরক্ষণ না থাকার কারণে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে তা হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে বর্তমান সরকার প্রাক-প্রাথমিকে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১২ সম্প্রদায়ের ভাষা প্রাক-প্রাথমিকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কাজ করলেও ইতোমধ্যে গারোসহ অনেক ভাষায় পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো হাজং ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকের পুস্তক প্রকাশিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার বিদ্যালয়ে ২১ জন হাজং শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা জন্মের পর থেকে মা ও পরিবারের কাছ থেকে হাজং ভাষা শিখেছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে হাজং ভাষা না থাকায় তাদের লেখাপড়ায় ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমি হাজং ভাষা জানি বিধায় ওই শিক্ষার্থীদের ভাষা রূপান্তর করে তা শেখানোর চেষ্টা করছি। এ অবস্থায় সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাজং ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকের পুস্তক অবিলম্বে প্রকাশিত হলে এই শিশু শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে তাদের মায়ের ভাষা।

জানা যায়, ময়মনসিংহের দুর্গাপুর উপজেলার খুজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহিন্দ্র হাজংয়ের ছেলে অন্তর হাজং গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের হাজং ভাষা সংরক্ষণে কাজ করে চলছে দেশের ৪টি জেলার একশটি গ্রামজুড়ে। তিনি হাজং ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের একজন উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি হাজং পরিবারের সন্তান। আমি আমার মায়ের ভাষা শিখে বড় হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে এই ভাষাটি সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের মায়ের ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বয়স্ক মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে তা সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে নিজেদের ভাষা শিক্ষায় উৎসাহিত করতে উঠান বৈঠকসহ নানা ধরনের আয়োজন করছি। কিন্তু হাজং ভাষার বর্ণমালা না থাকার কারণে তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগে ভাষাটি সংরক্ষণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।

স্থানীয় হাজংরা জানান, ১৯৪৬ সালের আগে এদেশে লক্ষাধিক হাজং জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। তবে হাতিখেদাও বিদ্রোহ ও টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে গিয়ে শাসকদের রোষানলের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমানে দেশের মাত্র ৪ বা ৫টি জেলার শতাধিক গ্রামে প্রায় ২০ হাজারের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে হাজংদের। এর মধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলেই বসবাস এই অর্ধেক জনসংখ্যার। তবে বিগত আদম শুমারিতে হাজংদের সংখ্যা অনেক কম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন হাজং ছাত্র সংগঠনের নেতা অন্তর হাজং। ফলে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন এই হাজং সম্প্রদায়ের নেতারা।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নিজের মায়ের ভাষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া সব ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা আরও জানান, জন্মের পর হাজং শিশুরা নিজস্ব ভাষায় সুখ ও দুঃখের ভাব বিনিময় করলেও জীবন-যাপন করতে হয় বাংলার হাত ধরেই।

এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ভাষা চর্চার সুযোগ না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে হাজং ভাষা। কিন্তু প্রতিটি মানুষ চায় তার মায়ের ভাষা নিয়ে গর্ব করে পথ চলতে। এই প্রেক্ষাপটে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ্য বইয়ে হাজং ভাষা অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি বলেও যোগ করেন তারা।

আমাদের সংবাদটি শেয়ার করুন..

এ পাতার আরও খবর

Sabuj Bangla Tv © All rights reserved- 2011| Developed By

Theme Customized BY WooHostBD